শুক্রবার, ০৩ জানুয়ারী ২০২৫, ০৭:২১ পূর্বাহ্ন
মুহাম্মদ আব্দুল বাছির সরদার: ‘দুই টোটের কাপা স্বর; ভেজা চোখ আর ভাঙা গলা’য় খোলা আকাশের নিচে প্রায় ১০ লক্ষাধিক মানুষের দুই হাতের আকুতি ‘আল্লাহ! আমাদের ক্ষমা কর’ ধ্বনিতে মুখরিত হয়েছে সুনামগঞ্জ জেলা ইজতেমার মাঠ। শনিবার সুনামগঞ্জের সদর উপজেলার গৌরারং ইউনিয়নের কুতুবপুর-বৈঠাখালী গ্রামের মধ্যবর্তী স্থানের মাঠে তিন দিনব্যাপি অনুষ্ঠিত হয়েছে বিশ্ব ইজতেমার অংশ জেলা ইজতেমা। ইজেতমায় মোনাজাত করেন কাকরাইল জামে মসজিদের ইমাম ও তাবলীগ জামাতের মুরুব্বী হাফিজ মাওলানা জুবায়ের আহমদ। বৃহস্পতিবার বাদ জুহর থেকে শুরু হওয়া শেষ দিন গতকাল শনিবার পর্যন্ত হেদায়তি বক্তব্য রাখেন মাওলানা আব্দুল মতিন, ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল মুকিত, মাওলানা রবিউল হক, আলজেরিয়ার শেখ আহমদ, মাওলানা দিলোয়ার হোসেন ও মাওলানা উমর ফারুক প্রমুখ। ইজেতমা অনুষ্ঠানটির সার্বিক পরিচালনায় ছিলেন সুনামগঞ্জ জেলা জিম্মাদার শায়েখ মাওলানা আনোয়ার হোসাইন।
বিশ্ব মুসলিমের হেদায়াত কামনা করে বক্তারা বলেন, মানুষের জীবন সংক্ষিপ্ত; তাই এই সংক্ষেপ জীবনের তাগিদে তার পরকালের অনন্ত জীবন বরবাদ করে ফেলছে। জীবনের সকল কাজ করতে কোন বাধা নেই, কিন্তু এর কারণে যদি নিজ ধর্মের কাজগুলো বাদ দিয়ে দেই, তবে এটা আমাদের জন্য সবচেয়ে দুঃখজনক। বক্তারা আরো বলেন, আমাদের জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সময়কে যদি কাজে লাগাতে পারি, তবেই আমাদের সফলতা আসবে। তারা আরো বলেন, সাহাবায়ে কেরাম অনেক কষ্ট করে জীবন পরিচালনা করলেও তারা আখেরাতকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন বলে আজ তারা সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়েছেন। তিন দিনের হেদায়তি বয়ানে তাবলীগ জামাতের মুরুব্বীরা বলেন, সময়ের মূল্য, জীবনের মূল্য ও আমলের মূল্য মানুষের অন্তরে যদি আসে, তবে তার জীবন এবং মরণ উভয়টাই সফল হবে।
এদিকে সুনামগঞ্জ জেলাসহ প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আবাল-বৃদ্ধ-বণিতাসহ সর্বস্তরের মানুষ ইজতেমায় আসেন। এছাড়া সারাদেশ থেকে তাবলীগের কাজে আসা দেশের বিভিন্ন জেলা ও বিদেশি মেহমানরাও উপস্থিত ছিলেন। সবচেয়ে ইজতেমার শেষদিনে আখেরী মোনাজাতে প্রায় ১০ লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে তথ্য পাওয়া গেছে।
যানবাহন সংকটে মুসুল্লীগণ: ইজতেমায় আসা মুসুল্লীগণ প্রথম দিনে থেকেই যানবাহন সংকটে পড়েছেন। বিশেষ করে শুক্রবার জুমআর নামায ও শেষ দিনের আখেরী মোনাজাতে অংশগ্রহণ করতে লোকজন যানবাহন সংকটে পড়েন। এছাড়া আখেরী মোনাজাতে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অনেক নারী-শিশুরাও অংশগ্রহণ করেন।
ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প স্থাপন: ইজতেমা মাঠে আগত মুসুল্লীদের চিকিৎসা দিতে ইজতেমা শুরু থেকেই ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। শেষ দিন পর্যন্ত মরহুম হাজী শেখ মোঃ আব্দুল বারী ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ফ্রি চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়। সেখানে গ্যাস, ডিসেন্টি, মাথা ব্যাথ্যা, এলার্জি, সর্দি-কাশিসহ বিভিন্ন ধরণের প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করা হয়। ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষ জানান, তিন দিনে প্রায় ৩০/৩৫ হাজার রোগিকে ঔষধসহ ফ্রি চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
এক জনের মৃত্যু: জয়কলস ইউনিয়নের তালুকগাঁও গ্রামের সিকন্দর আলী (৫০) নামে একজন মারা যাওয়ার খবর পাওয়া যায়।
আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সন্তোষজনক: তিনদিনের সুনামগঞ্জ জেলা ইজতেমার শেষ দিন পর্যন্ত মাঠে কোন ধরণের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সন্তোষজনক ছিল বলে জানান ইজতেমা মাঠে বসানো পুলিশের কন্ট্রোল রুম নিয়ন্ত্রণকারী ইন্সপেক্টর শেখ সাজেদুর রহমান। তিনি জানান, কোন ধরণের অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি, কিংবা সেখানে দায়িত্বরত পুলিশের চোখেও ধরা পড়েনি। আমরা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় সচেতন ছিলাম বলেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল।